শুরুর একাদশে নেই লিওনেল মেসি, অ্যালেক্সিস ম্যাকঅ্যালিস্টার, রদ্রিগো ডি পলের মতো সব নিয়মিত মুখ। কোয়ার্টার ফাইনাল আগেই নিশ্চিত হওয়ায় প্রধান খেলোয়াড়দের বিশ্রাম দিয়েছেন কোচ লিওনেল স্কালোনি। মেসির পাশাপাশি মার্কাস আকুনাও চোটের কারণে মাঠের বাইরে ছিলেন। আবার নিষেধাজ্ঞার কবলে ছিলেন স্কালোনি নিজেই।
কিন্তু ডাগআউটে পাবলো আইমার আর ওয়াল্টার স্যামুয়েলদের নিয়ে কিংবা মাঠে মূল একাদশের বাইরের খেলোয়াড় নামিয়ে দিয়েও আর্জেন্টিনাকে থামানো যায়নি। আরও স্পষ্ট করে বললে, থামানো যায়নি ‘এল তোরো’ খ্যাত লাউতারো মার্টিনেজকে। তার জোড়া গোলের সুবাদে টানা তিন জয় নিয়ে দাপটের সঙ্গেই কোপা আমেরিকার গ্রুপপর্ব শেষ করলো আর্জেন্টিনা।
টানা তিন ম্যাচে গোল করে এদিন আরেক রেকর্ডেও নাম বসালেন লাউতারো মার্টিনেজ। ২০০১ সালের পর থেকে কোপা আমেরিকায় গ্রুপপর্বের তিন ম্যাচেই গোল করার রেকর্ড ছিল না কোনো খেলোয়াড়ের। ২৩ বছর পর সেই কীর্তি গড়লেন আর্জেন্টাইন এই স্ট্রাইকার। ৪ গোল করে আসরের সর্বোচ্চ গোলদাতাও তিনি। এদিন আর্জেন্টিনার গোলের ব্যবধান আরেকটু বাড়তে পারতো। যদিও ৭২ মিনিটে পেনাল্টি মিস করে বসেন বার্থডে বয় লিয়ান্দ্রো পারেদেস।
পারেদেসও পেনাল্টি মিস করে নাম লিখিয়েছেন ইতিহাসের খাতায়। বিগত ২৫ বছরে আর্জেন্টিনার জার্সিতে কোপা আমেরিকায় প্রথম পেনাল্টি (শ্যুটআউট ব্যতীত) মিস করলেন তিনি। এর আগে সবশেষ এমন মিস করেছিলেন রবার্তো আয়ালা। ১৯৯৯ সালে ব্রাজিলের বিপক্ষে ম্যাচে ছিল এমন কিছু। যদিও পারেদেস পেনাল্টি মিসের আগেই আর্জেন্টিনা পেয়েছিল লিড, ম্যাচেও ছিল পূর্ণ আধিপত্য।
প্রথমার্ধে গোলের দেখা পায়নি আর্জেন্টিনা। কিছুটা ধীরগতির শুরুর পর আক্রমণে যখনই গিয়েছে তখনই পেরুর লো-ব্লক ডিফেন্সের কাছে আটকাতে হয়েছে তাদের। আর গোলবারের নিচে পেদ্রো গ্যালেসি ছিলেন পেরুর ত্রাতা হয়ে। অন্তত তিনবার নিশ্চিত গোল থেকে দলকে বাঁচিয়েছেন তিনি। যদিও বিরতির পরপরই ভাঙে তার প্রতিরোধ। আনহেল ডি মারিয়ার বাড়ানো থ্রু বল ভেঙে দেয় পেরুর ডিফেন্স লাইনআপ। এগিয়ে আসা গোলরক্ষককে আলতো চিপে পরাস্ত করেন লাউতারো।
৪৭ মিনিটের সেই গোলটার পর আরও একবার ধীরগতির ফুটবল উপহার দিয়েছে আর্জেন্টিনা। দুই দলকেই বেশ কয়েকবার মুখোমুখি অবস্থায় দেখা গিয়েছে। ম্যাচে ফাউলের বাঁশিও বেজেছে বারবার। দুই দল মিলিয়ে ফাউলের ঘটনা হয়েছে ৩১ বার। যার অর্থ গড়ে প্রতি ৩ মিনিটে ১টি করে ফাউল দেখেছে আর্জেন্টিনা ও পেরুর ম্যাচ। যে কারণে খেলা থামাতে হয়েছে। দর্শকদের মাঝেও ছিল অসন্তুষ্টি।
এরমাঝে একটা গোল আর্জেন্টিনা পেয়েছিল বটে। যদিও নিকোলাস টালিয়াফিকোর সেই গোল বাতিল হয়ে যায় ফাউলের অভিযোগের। ম্যাচের ৭২ মিনিটে ডি মারিয়ার পাস ধরেই আরেকটি গোলের সুযোগ পায় আর্জেন্টিনা। গোলমুখে আর্জেন্টিনার শট হেসুস কাস্তিলোর হাতে লাগায় পেনাল্টি পারা। পারেদেসের জোরালো শট ফিরে আসে গোলবার থেকে।
আর্জেন্টিনার লিড পেতে খুব বেশি সময় লাগেনি এরপর। ম্যাচের ৮৬ মিনিটে আরও একবার লাউতারো মার্টিনেজের গোল। লম্বা পাস ধরে বল নিয়ে ডিবক্সে ঢুকে পড়েছিলেন এল তোরো। আরও একবার চিপ শটে পেয়ে যান গোল। পেয়ে যান কোপা আমেরিকায় নিজের ৪র্থ গোল।
৫ জুলাই কোয়ার্টার ফাইনালে নিজেদের পরের ম্যাচ খেলতে নামবে আলবিসেলেস্তেরা। এই গ্রুপ থেকে নাটকীয়ভাবে বাদ পড়েছে চিলি। ৩ ম্যাচ থেকে ২ পয়েন্ট নিয়ে বাদ পড়লো ২০১৫ এবং ২০১৬ সালের চ্যাম্পিয়নরা। আর উত্তর আমেরিকা থেকে আসা কানাডা ৩ ম্যাচ থেকে ৪ পয়েন্ট নিয়ে চলে গেল কোয়ার্টার ফাইনালে।